একজিমা হলে কি খাওয়া যাবে না? একজিমা একটি ত্বকের রোগ যা ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব এবং ফাটল সৃষ্টি করে। এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ।
একজিমা হলে কী খাওয়া উচিত আর কী নয়, তা জানা জরুরি। কিছু খাবার একজিমার সমস্যা বাড়াতে পারে। আবার কিছু খাবার একজিমার উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। তাই খাদ্য তালিকায় কী রাখা উচিত এবং কী বাদ দেওয়া উচিত, তা জানা প্রয়োজন। এই ব্লগে আমরা একজিমা রোগীদের জন্য কোন খাবারগুলো ক্ষতিকর এবং কোনগুলো উপকারী, তা নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি, এই তথ্যগুলো আপনাকে একজিমা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
একজিমার প্রাথমিক ধারণা
একজিমা হলো এক ধরনের ত্বকের রোগ যা ত্বকে চুলকানি, লালচে এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত শুষ্ক এবং সংবেদনশীল ত্বকে বেশি দেখা যায়। একজিমার কারণে ত্বকের স্বাভাবিক সুরক্ষা ব্যাহত হয় এবং ত্বক সহজেই সংক্রমিত হতে পারে। এটি শিশুদের মধ্যে বেশি হয়, তবে যেকোন বয়সের মানুষের হতে পারে। এখন আমরা একজিমা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানব।
একজিমা কী
একজিমা হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী ত্বকের সমস্যা যা ত্বকে চুলকানি এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত ত্বকের উপর ফুসকুড়ি বা লাল দাগ হিসাবে দেখা যায়। একজিমা প্রায়শই শুষ্ক ত্বকে দেখা দেয় এবং ত্বক ফাটতে পারে। এর বিভিন্ন ধরনের আছে, যার মধ্যে এটপিক ডার্মাটাইটিস সবচেয়ে সাধারণ। একজিমার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি, তবে পরিবেশগত এবং জেনেটিক ফ্যাক্টর এর সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
লক্ষণসমূহ
একজিমার প্রধান লক্ষণ হলো তীব্র চুলকানি। ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে এবং ফোলা দেখা দেয়। চুলকানোর কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং সংক্রমণ হতে পারে। ত্বকের উপর ফুসকুড়ি এবং ছোট ছোট ফোস্কা দেখা যেতে পারে। ত্বক শুষ্ক এবং খসখসে হয়ে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে, গালে এবং কপালে একজিমার লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
খাদ্য ও একজিমার সম্পর্ক
একজিমা একটি ত্বকের রোগ যা অনেকের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করে। একজিমা বেড়ে যেতে পারে অনেক কারণে। এর মধ্যে খাদ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সঠিক খাদ্য নির্বাচন একজিমা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। তাই, একজিমা এবং খাদ্যের সম্পর্ক বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
খাদ্যের প্রভাব
একজিমা রোগীর জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। দুধ, ডিম, সয়াবিন, গম, মাছ, এবং বাদাম একজিমার সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে। এই খাবারগুলো ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে একজিমার উপসর্গ বেড়ে যায়।
সংবেদনশীলতা
কিছু লোকের একজিমা থাকে কিছু নির্দিষ্ট খাবারের কারণে। এগুলোকে খাদ্য সংবেদনশীলতা বলে। হাইস্টামিন সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন টমেটো, চকলেট, এবং বেগুনও একজিমা বাড়াতে পারে। তাই এই খাবারগুলো খাবার তালিকা থেকে বাদ দেয়া উচিত।
খাদ্য তালিকা নির্বাচন
একজিমা হলে চকলেট, দুগ্ধজাত পণ্য, এবং প্রসেস করা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলি ত্বকের সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাজা ফল ও শাকসবজি বেশি খাওয়া উপকারী।

পুষ্টিকর খাবার
পরিহারযোগ্য খাবার
দুগ্ধজাত পণ্য ও একজিমা
একজিমা এমন একটি চর্মরোগ যা অনেকের জন্য কষ্টদায়ক হতে পারে। রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। এ ক্ষেত্রে দুগ্ধজাত পণ্য কি আপনার একজিমাকে প্রভাবিত করতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে নিচের তথ্যগুলো পড়ুন।
দুগ্ধজাত পণ্যের প্রভাব
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, দুগ্ধজাত পণ্য একজিমাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশেষ করে দুধ, চিজ, এবং মাখন।
- দুধে থাকা প্রোটিন কিছু মানুষের ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে।
- চিজে ল্যাকটোজ যা অনেকের হজমে সমস্যা করে।
- মাখনে থাকা চর্বি ত্বকের প্রদাহ বাড়ায়।
এ কারণে অনেক ডাক্তার একজিমা রোগীদের দুগ্ধজাত পণ্য এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।
বিকল্প পণ্য
দুগ্ধজাত পণ্য এড়িয়ে চলার জন্য কিছু স্বাস্থ্যকর বিকল্প রয়েছে:
দুগ্ধজাত পণ্য | বিকল্প |
---|---|
দুধ | সয়া দুধ, বাদাম দুধ |
চিজ | ভেগান চিজ |
মাখন | অলিভ অয়েল, কোকোনাট অয়েল |
এই বিকল্প পণ্যগুলি একজিমা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
আপনার খাদ্যাভ্যাসে এই পরিবর্তনগুলি আনলে একজিমা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
গ্লুটেন ও একজিমা
গ্লুটেন ও একজিমা সম্পর্কিত আলোচনায়, অনেকেই জানেন না যে গ্লুটেন একজিমা বাড়াতে পারে। গ্লুটেন হলো একটি প্রোটিন যা গম, বার্লি এবং রাইয়ে পাওয়া যায়। কিছু মানুষের শরীর গ্লুটেন সহ্য করতে পারে না, ফলে ত্বকে একজিমার সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার
গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় প্রধানত গমের তৈরি যেকোনো খাবার অন্তর্ভুক্ত। যেমন রুটি, পাস্তা, বিস্কুট, কেক। বার্লি ও রাইয়ের তৈরি খাবারেও গ্লুটেন থাকে। সয়া সস, কিছু ধরনের স্যুপও গ্লুটেন বহন করে।
গ্লুটেন মুক্ত খাবার
গ্লুটেন মুক্ত খাবার খেতে চাইলে চাউল, ভুট্টা, আলু, শাকসবজি বেছে নেওয়া উত্তম। ফলমূল ও বাদামও গ্লুটেন মুক্ত। কিছু বিশেষ ধরনের আটা যেমন চালের আটা, বাদামের আটা গ্লুটেন মুক্ত। বাজারে আজকাল গ্লুটেন মুক্ত পণ্যও সহজলভ্য।

Credit: www.shajgoj.com
প্রক্রিয়াজাত খাবার ও একজিমা
প্রক্রিয়াজাত খাবার ও একজিমা সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। একজিমা একটি ত্বকের সমস্যা। এটি ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করে। প্রক্রিয়াজাত খাবার একজিমা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই এই খাবারগুলি এড়ানো উচিত।
প্রক্রিয়াজাত খাবার কী
প্রক্রিয়াজাত খাবার হলো যেসব খাবার কারখানায় তৈরি হয়। এগুলি প্যাকেটজাত হয়। যেমন স্ন্যাকস, ফাস্ট ফুড, কনফেকশনারি। এসব খাবার দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
প্রভাব ও পরিহার
প্রক্রিয়াজাত খাবার একজিমা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব খাবারে থাকে প্রিজারভেটিভ, রঙ এবং স্বাদ বাড়ানোর উপাদান। এগুলি শরীরে অ্যালার্জি তৈরি করে। তাই একজিমা রোগীদের এসব খাবার এড়ানো উচিত।
প্রাকৃতিক খাবার খান। বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল এবং বিশুদ্ধ পানি পান করুন। এতে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। একজিমা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ফলের গুরুত্ব

একজিমা হলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা গুরুত্বপূর্ণ। ফল এই সময়ে পুষ্টির বড় উৎস। সঠিক ফল খেলে একজিমার উপসর্গ কমে যেতে পারে। তাই, ফল খাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
উপকারী ফল
একজিমা রোগীদের জন্য কিছু ফল উপকারী। আপেল, কলা, পেয়ারা খাওয়া ভালো। এই ফলগুলিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকে। এটি ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
তরমুজ ও কমলালেবু খাওয়া উপকারী। এতে জলের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে ত্বক হাইড্রেটেড থাকে।
পরিমাণ ও সময়
ফল খাওয়ার পরিমাণ ও সময় গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ফল খাওয়া উচিত। সকালের নাস্তায় ফল খাওয়া ভালো। এতে শক্তি পাওয়া যায়।
বিকেলে ফল খেলে শরীর সতেজ থাকে। বেশি ফল খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত ফল খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে।
সবজি ও একজিমা
একজিমা একটি সাধারণ ত্বকের সমস্যা। খাদ্যাভ্যাস এই সমস্যার প্রবাহ ও তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অনেক সময় বিশেষ কিছু খাবার এড়িয়ে চললে একজিমার উপসর্গ কমে যায়। সবজি একজিমা রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সবজি বাছাই করলে ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায়।
উপকারী সবজি
একজিমা রোগীদের জন্য কিছু সবজি খুব উপকারী। এই সবজি গুলি ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- গাজর: গাজর ভিটামিন এ সমৃদ্ধ, যা ত্বকের জন্য ভালো।
- ব্রোকলি: ব্রোকলি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা ত্বককে সুরক্ষিত রাখে।
- পালং শাক: পালং শাক ভিটামিন সি ও আয়রন সমৃদ্ধ, যা ত্বককে পুষ্টি দেয়।
- কুমড়া: কুমড়া ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
পরিমাণ ও সময়
সবজি সঠিক পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত খেলে ত্বকের সমস্যা বাড়তে পারে। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সবজি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
- প্রতিদিন অন্তত ২-৩ কাপ সবজি খাওয়া উচিত।
- সবজি তাজা ও পরিষ্কার থাকা উচিত।
- সবজির রসও উপকারী হতে পারে।
একজিমা রোগীদের ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ধীরে ধীরে করা উচিত। প্রতিদিন খাবারের পুষ্টিগুণ বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

একজিমা রোগীদের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন আমাদের শরীরের কোষের গঠন এবং মেরামত করে। তবে, সকল প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার একজিমার জন্য ভালো নয়। কিছু প্রোটিন খাদ্য একজিমার উপসর্গ বাড়িয়ে তুলতে পারে। নিচে আমরা উপকারী এবং পরিহারযোগ্য প্রোটিনের তালিকা দিয়েছি।
উপকারী প্রোটিন
- মাছ: বিশেষ করে স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডিন ইত্যাদি। এগুলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- মুরগির মাংস: চর্বি কম এবং প্রোটিন বেশি, যা একজিমা রোগীদের জন্য উপকারী।
- ডাল এবং মসুর: ভেজিটেরিয়ান প্রোটিনের ভালো উৎস। এগুলো সহজে হজম হয়।
- ডিম: প্রোটিনের ভালো উৎস, তবে ডিমের এলার্জি থাকলে এটি এড়িয়ে চলুন।
পরিহারযোগ্য প্রোটিন
- গরুর মাংস: উচ্চ ফ্যাট এবং প্রদাহ বাড়াতে পারে।
- দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, পনির, দই একজিমার উপসর্গ বাড়াতে পারে।
- সয়াবিন: কিছু ক্ষেত্রে সয়াবিন প্রোটিন এলার্জির কারণ হতে পারে।
- প্রসেসড মাংস: সসেজ, বেকন, হ্যাম একজিমার উপসর্গ বাড়াতে পারে।

Credit: tv9bangla.com
বাদাম ও একজিমা
একজিমা একটি ত্বকের সমস্যা যা তীব্র অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যায় খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে বাদাম এর প্রভাব উল্লেখযোগ্য। বাদাম বিভিন্ন প্রকার হতে পারে এবং এদের প্রভাব একজিমা রোগীদের জন্য ভিন্ন হতে পারে।
উপকারী বাদাম
কিছু বাদাম একজিমা রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। যেমন:
- আলমন্ড: ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এই বাদাম ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- কাজু: এতে থাকা প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এই বাদামগুলি নিয়মিত খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত হতে পারে। তবে, সব কিছু পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
সংবেদনশীলতা
কিছু বাদাম একজিমা রোগীদের জন্য সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন:
- পিনাট: অনেকের পিনাটে অ্যালার্জি থাকতে পারে, যা একজিমা বৃদ্ধি করতে পারে।
- হ্যাজেলনাট: এটি অনেকের ত্বকে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
তাই একজিমা রোগীদের এই বাদামগুলি এড়িয়ে চলা উচিত।
বাদামের নাম | উপকারীতা | সংবেদনশীলতা |
---|---|---|
আলমন্ড | ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে | সংবেদনশীলতা কম |
কাজু | আর্দ্রতা বজায় রাখে | সংবেদনশীলতা কম |
পিনাট | অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে | সংবেদনশীলতা বেশি |
হ্যাজেলনাট | প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে | সংবেদনশীলতা বেশি |
মশলা ও একজিমা
একজিমার মতো ত্বকের সমস্যায় খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে মশলাজাতীয় খাবার একজিমার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। আসুন দেখি কোন মশলা উপকারী এবং কোন মশলা পরিহার করা উচিত।
উপকারী মশলা
কিছু মশলা একজিমা রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। এগুলো ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে:
- হলুদ: হলুদে থাকা কারকিউমিন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- আদা: আদা প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে।
- মেথি: মেথি বীজ ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে।
পরিহারযোগ্য মশলা
কিছু মশলা একজিমার সমস্যা বাড়াতে পারে। এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত:
- লাল মরিচ: লাল মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে।
- গরম মশলা: গরম মশলা ত্বকের প্রদাহ বাড়াতে পারে।
- লবঙ্গ: লবঙ্গ ত্বকের সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে।
তেল ও একজিমা

একজিমা হলে খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন। বিশেষ করে তেল। বিভিন্ন প্রকার তেল একজিমার উপসর্গ কমাতে বা বাড়াতে পারে। সঠিক তেল নির্বাচন একজিমা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। নিচে উপকারী ও পরিহারযোগ্য তেলের তালিকা দেওয়া হলো।
উপকারী তেল
একজিমার জন্য কিছু তেল উপকারী হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নারকেল তেল। এটি ত্বকের শুষ্কতা কমায়। এছাড়া অলিভ অয়েল। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের প্রদাহ কমায়। একজিমার জন্য ফিশ অয়েলও উপকারী। এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
পরিহারযোগ্য তেল
একজিমা হলে কিছু তেল এড়ানো উচিত। উদাহরণস্বরূপ, সয়াবিন তেল। এতে রয়েছে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড যা প্রদাহ বাড়াতে পারে। কর্ন অয়েলও পরিহার্য। এটি ত্বকের সমস্যা বাড়ায়। সানফ্লাওয়ার অয়েলও একজিমার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এই তেলগুলো এড়িয়ে চলা ভালো।
পানীয় ও একজিমা
একজিমার মতো ত্বকের সমস্যা হলে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পানীয়তেও এই সমস্যার প্রভাব থাকতে পারে। সঠিক পানীয় পছন্দ করলে একজিমার উপশম সম্ভব হতে পারে।
উপকারী পানীয়
একজিমার জন্য কিছু পানীয় উপকারী হতে পারে। এগুলো ত্বকের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে:
- পানি: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বক হাইড্রেটেড থাকে। এতে একজিমার উপশম হতে পারে।
- গ্রিন টি: গ্রিন টির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপার্টি আছে। এটি ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- ক্যামোমাইল চা: ক্যামোমাইল চা ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি একজিমার উপশমে কার্যকর।
পরিহারযোগ্য পানীয়
কিছু পানীয় একজিমার সমস্যা বাড়াতে পারে। এদের থেকে দূরে থাকা উচিত:
- অ্যালকোহল: অ্যালকোহল ত্বককে ডিহাইড্রেট করে। এতে একজিমার সমস্যা বাড়ে।
- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: ক্যাফেইন ত্বকের প্রদাহ বাড়াতে পারে। তাই কম ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিত।
- সুগারযুক্ত পানীয়: বেশি চিনি একজিমার প্রদাহ বাড়াতে পারে। তাই চিনি কম খাওয়া উচিত।
বাড়িতে রান্না করা খাবার

একজিমা হলে বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ। এটি শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর নয়, বরং এতে এলার্জি বা সংবেদনশীলতা থাকার ঝুঁকিও কম। বাড়িতে রান্না করলে আপনি উপাদানগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এবং পুষ্টিকর উপায়ে খাবার প্রস্তুত করতে পারবেন।
উপকারিতা
বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। প্রথমত, আপনি তাজা এবং পুষ্টিকর উপাদান ব্যবহার করতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, প্রিজারভেটিভ বা কৃত্রিম উপাদান এড়ানো যাবে। তৃতীয়ত, খাবার প্রস্তুত করার সময় আপনি পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে পারবেন।
রেসিপি পরামর্শ
একজিমা হলে কিছু সহজ এবং পুষ্টিকর রেসিপি তৈরি করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভেজিটেবল স্যুপ, গ্রিলড চিকেন, এবং ব্রাউন রাইস। এছাড়া, সবজি এবং ফলের সালাদও খুব ভালো বিকল্প। রান্নার সময় কম তেল এবং মশলা ব্যবহার করা উচিত।
খাদ্য গ্রহণের সময়সূচী

একজিমা হলে খাদ্য গ্রহণের সময়সূচী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্য গ্রহণের সময় ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটি শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সঠিক সময়ে এবং নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাবার খেলে একজিমার লক্ষণগুলি সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
সঠিক সময়
সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া একজিমার লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবার নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া উচিত। খাবারের সময়সূচী অনুসরণ করলে শরীরের মেটাবলিজম ভালো থাকে।
পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ
খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা একজিমার লক্ষণগুলি কমাতে সহায়ক। অতিরিক্ত খাবার খেলে একজিমার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। প্রতিবার খাবারের পরিমাণ পরিমিত হওয়া উচিত।
স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন সবজি, ফলমূল ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। তেল, চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।
বাচ্চাদের একজিমা ও খাদ্য

বাচ্চাদের একজিমা হলে কী খাওয়ানো উচিত তা জানা জরুরি। সঠিক খাদ্য নির্বাচন একজিমার উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। অনেক সময় নির্দিষ্ট খাবার একজিমা বাড়াতে পারে। তাই বাচ্চাদের জন্য সঠিক খাদ্য নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ যত্ন
একজিমা হলে বাচ্চাদের খাবারের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। খাদ্য তালিকা থেকে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী খাবার বাদ দিতে হবে। দুধ, ডিম, বাদাম, চিংড়ি এবং সয়াসহ কিছু খাবার একজিমা বাড়াতে পারে। তাই এই ধরনের খাবার থেকে দূরে থাকা ভালো।
পুষ্টির গুরুত্ব
পুষ্টিকর খাবার বাচ্চাদের একজিমার উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। শাকসবজি, ফলমূল, এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো উচিত। মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড একজিমা কমাতে পারে। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করানো উচিত। এটি শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়ক।
প্রয়োজনীয় খাদ্য সম্পূরক

একজিমা হলে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সঠিক খাদ্য সম্পূরক গ্রহণ করলে একজিমা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হতে পারে। বিশেষ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কিছু সম্পূরক খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপকারী সম্পূরক
একজিমা রোগীদের জন্য কিছু বিশেষ সম্পূরক খাদ্য উপকারী হতে পারে। প্রোবায়োটিকস, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, এবং ভিটামিন ডি এর মধ্যে অন্যতম। প্রোবায়োটিকস অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমায়। ভিটামিন ডি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
পরামর্শ ও সতর্কতা
একজিমা হলে খাদ্য সম্পূরক গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। অতিরিক্ত সম্পূরক গ্রহণ ক্ষতির কারণ হতে পারে। সঠিক পরিমাণে এবং নিয়মিত গ্রহণ করা জরুরি। সম্পূরক গ্রহণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা প্রয়োজন। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খান।
Frequently Asked Questions
একজিমা হলে কি খেতে পারি?
আপনি সাধারণত শাকসবজি, ফল এবং সুষম খাবার খেতে পারেন।
একজিমা হলে কোন খাবার এড়ানো উচিত?
দুগ্ধজাত, গ্লুটেন, সয়া, বাদাম এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ানো উচিত।
একজিমা হলে কোন ফল খাওয়া নিরাপদ?
আপেল, কলা, এবং বেরি ফল খাওয়া নিরাপদ।
একজিমা হলে কোন পানীয় উপকারী?
পানি ও হার্বাল চা উপকারী।
কোন খাবার একজিমা বাড়ায়?
মশলাদার খাবার, চিনি, এবং অ্যালকোহল একজিমা বাড়াতে পারে।
একজিমা হলে কি চকলেট খাওয়া যাবে?
চকলেট এড়ানো ভালো, কারণ এতে একজিমা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
Conclusion
একজিমা হলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। কিছু খাবার এড়িয়ে চলা ভাল। যেমন, দুগ্ধজাত খাবার, গ্লুটেন, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার। তাজা সবজি, ফলমূল, এবং জল বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর খাদ্য একজিমা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস পালন করলে ত্বক ভাল থাকে। তাই, খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনতে দ্বিধা করবেন না। একজিমার উপসর্গ কমাতে খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।